চলে গেলেন চিত্রনায়িকা দিতি

দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক অসুস্থতার সঙ্গে লড়াই করে রোববার শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেছেন চিত্রনায়িকা পারভিন সুলতানা দিতি।
রোববার বিকেল ৪টা ৫ মিনিটে তিনি মৃত্যুবরণ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। এনটিভি অনলাইনকে তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন ইউনাইটেড হাসপাতালের মিডিয়া মুখপাত্র ডা. সাগুফতা।

দীর্ঘ তিন মাস ক্যানসারের চিকিৎসার পর ভারতের মাদ্রাজ ইনস্টিটিউট অব অর্থোপেডিকস অ্যান্ড ট্রমাটোলজি (এমআইওটি) হাসপাতাল থেকে গত ৮ জানুয়ারি অসুস্থতা নিয়েই দেশে ফিরেছিলেন অভিনেত্রী দিতি। ওই দিনই তাঁকে ভর্তি করানো হয় গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে। এতদিন তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন।

গত বছরের ২৯ জুলাই চেন্নাইয়ের মাদ্রাজ ইনস্টিটিউট অব অর্থোপেডিকস অ্যান্ড ট্রমাটোলজিতে তাঁর মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করা হয় এবং সেটি সফল হয়। গত ২০ সেপ্টেম্বর ঢাকায় ফিরলেও মাস না গড়াতেই আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এরপর গত বছরের নভেম্বরের শুরুর দিকে দ্বিতীয় দফা চিকিৎসার জন্য দিতিকে ভারতে নেওয়া হয়। সে সময় আবার অস্ত্রোপচারের পর শঙ্কামুক্ত অবস্থায় ছিলেন তিনি। তবে সম্প্রতি তাঁর শারীরিক পরিস্থিতির আবারও অবনতি ঘটে। পারকিনসন্স রোগে আক্রান্ত হন তিনি। এরপর তাঁর মেয়ে লামিয়া চৌধুরি চিকিৎসকদের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন। লামিয়া নিজের স্ট্যাটাসে অনেকটা আক্ষেপ করেই বলেছিলেন, ক্যানসার বা টিউমার নয়, আরোগ্য লাভের জন্য যে বিকিরণ ব্যবহার হচ্ছে সেটার জন্যই তাঁর মা এখন মৃত্যুপথযাত্রী। তিনি আরো জানান, এই বিকিরণের জন্যই দিতি এখন নতুন করে পারকিনসন্স (শরীরের অঙ্গ মস্তিষ্কের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়) রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এ জন্য বিরক্তি প্রকাশ করে বলেন, তাঁর মা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর জন্য কোনো ইঁদুর নন।

দিতিকে সুস্থ করে তোলার জন্য যে চিকিৎসা করা হচ্ছে, সেটির ওপর বিরক্তিই প্রকাশ পেয়েছিল লামিয়ার স্ট্যাটাসে। লামিয়া লিখেছিলেন, ‘তিনি (দিতি) মারা যাচ্ছেন। এ ব্যাপারে আমাকে কোনো প্রশ্ন করবেন না। আর তিনি দ্রুত আরোগ্য লাভ করবেন এ ধরনের বাজে আশ্বাসও দেবেন না। চিকিৎসকদেরও আর কিছু করার নেই। বিকিরণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে এখন তিনি আরেক রোগ পারকিনসন্সে আক্রান্ত। ক্যানসার তাঁকে মারছে না। মায়ের টিউমারও ফিরে আসেনি। এই বিকিরণের কারণেই মারা যাচ্ছেন মা। আমি আর আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারব না। আমি আর মায়ের সুস্থতা কামনা করে প্রার্থনা করব না। আর আপনারা যদি প্রার্থনা করেন, তাহলে দোয়া করুন যেন মা তাড়াতাড়ি আর কষ্টহীনভাবে যেন পৃথিবী ত্যাগ করেন। গবেষণাগারের ইঁদুরের জীবন নিয়ে তিনি যেন না বাঁচেন। যদি আল্লাহ দয়াশীল হন, তাহলে মায়ের প্রতি দয়া দেখাবেন আর এই কষ্ট সহ্যের অভিশাপ থেকে মুক্তি দেবেন। আল্লাহ আমার মাকে মৃত্যু উপহার দিন। আপনার ওপর মায়ের ইমান আছে। এমনকি এখনো তিনি আমাদের ডাকেন না, আপনাকে ডাকেন। আল্লাহ আপনি যা ভালো মনে করেন, তাই করেন।’ এই স্ট্যাটাসটি লামিয়া লিখেছিলেন গত ৪ জানুয়ারি।

পারভীন সুলতানা দিতি  জন্মগ্রহণ করেন ১৯৬৫ সালের ৩১ মার্চ, নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁওয়ে।

১৯৮৪ সালে নতুন মুখের সন্ধানের মাধ্যমে দেশীয় চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত হন দিতি। তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র উদয়ন চৌধুরী পরিচালিত ‘ডাক দিয়ে যাই’। কিন্তু ছবিটি শেষ পর্যন্ত মুক্তি পায়নি। দিতি অভিনীত মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম চলচ্চিত্র ছিল ‘আমিই ওস্তাদ’। ছবিটি পরিচালনা করেছিলেন আজমল হুদা মিঠু। এরপর দিতি প্রায় দুই শতাধিক ছবিতে কাজ করেছেন। সুভাষ দত্ত পরিচালিত ‘স্বামী স্ত্রী’ ছবিতে দিতি আলমগীরের স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেন। এই ছবিতেই অভিনয় করে দিতি প্রথমবারের মতো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।

মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দিতি ছোট পর্দার কিছু একক ও ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করেছেন । এ ছাড়া তিনি রান্না বিষয়ক অনুষ্ঠানও উপস্থাপনা করেছেন।

হীরামতি, দুই জীবন, ভাই বন্ধু, উছিলা, লেডি ইন্সপেক্টর, খুনের বদলা, আজকের হাঙ্গামা প্রভৃতি দিতির উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ সূত্র ঃ- এনটিভি অনলাইন/ ২০-০৩-১৬