বেড়েই চলেছে বিকাশ’র মাধ্যমে প্রতারণা > প্রশাসন নিশ্চুপ

মোবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে নগর, বন্দর থেকে শুরু করে প্রত্যান্ত এলাকার জনগন আর্থিক লেনদেনের সুবিধা ভোগ করলেও সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের অপতৎপরতায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন এর গ্রাহকরা। প্রতারক চক্রের নানামুখি কৌশলে বহু মানুষ সর্বশান্ত হচ্ছেন। প্রযুক্তি নির্ভর এই মোবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে সাম্প্রতিক সময়ে বেড়েই চলেছে প্রতারণা। গেল রোববার আবারও বিকাশ’র মাধ্যমে দু’টি প্রতারণার ঘটনার খবর পাওয়া গেছে।  ভুক্তভোগিদের অভিযোগ, মোবাইল ব্যাংকিং-এ বিশেষ করে বিকাশ’র মাধ্যমে দিনের পর দিন বহু মানুষকে সর্বশান্ত করলেও প্রশাসন কোনই পদক্ষেপ নিচ্ছেনা। নিরব ভুমিকা পালন করছে।
মোবাইল ব্যাংকিং-এর গ্রাহকদের কাছ থেকে জানাগেছে, সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র আগে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে সাধারণ মানুষকে তাদের সেলফোনে লটারি বিজয়ী হওয়া বা অন্য প্রলোভন দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনা অহরহ ঘটতো। এ প্রক্রিয়ায় ওই চক্র মানুষভেদে লক্ষাধিক টাকাও হাতিয়ে নিয়েছে। গ্রাহকরা জানান, প্রতারক চক্র প্রতারণা কাজে নারীদেরকেও ব্যবহার করছে। ইদানিং প্রলোভনের প্রতারণার পাশাপাশি নতুন কৌশল অবলম্বন করছে প্রতারক চক্র। বিকাশ গ্রাহকদের ফোন করে তারা হটাৎকরেই বলে বসছে যে, ‘ আপনার বিকাশে ভুল করে এতো টাকা ঢুকে গেছে। দয়াকরে যদি এই নম্বরে টাকাটা ফেরত দিতেন’। এই রকমই প্রতারণার মুখে পড়তে বসেছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের আইনজীবি মিজানুর রহমান।
মিজানুর রহমান বলেন, ‘ নিজেকে কুষ্টিয়ার মানুষ পরিচয় দিয়ে আমার সেলফোনে ফোন করে একজন জানায় যে, ভুল করে ৫ হাজার ১ শ টাকা চলে গেছে। আপনার মোবাইলে ম্যাসেজে দেখেন আমার এখান থেকে ভুল করে টাকা আপনার মোবাইলে ঢুকে গেছে’। তিনি বলেন, ‘আমার বিকাশে কত টাকা আছে এমনটা জানতেও চায় সে। আমি তাকে সরল বিশ্বাসে তাকে টাকার পরিমাণও বলে ফেলি। কথা শেষ হওয়ার পর দেখি যে একটা ম্যাসেজ আমার সেলফোনে জামা হয়ে আছে। তাতে ৫ হাজার ১ শ টাকা আসার কথা উল্লেখ রয়েছে।
তিনি জানান, রোববার দুপুরে তার পরিচিত এক বিকাশ এজেন্টের দোকানে যান ওই ৫ হাজার ১ শ টাকা ফেরত দিতে। সেখানেই ধরা পড়ে প্রতারণার বিষয়টি। তিনি বলেন, ‘ ওই বিকাশের এজেন্টকে ঘটনাটি বলার পর প্রতারকদের দেয়া ০১৭৬০২৫৫৯২৩ নম্বরে টাকা ফেরত দিতে বললে ওই দোকান সন্দেহ বশত জিজ্ঞেস করেন যে এই নম্বরতো আপনার নম্বরের সঙ্গে মিলেনা। সাধারণতঃ একটা সংখ্যা ভুল হলে না হয় ভুল করে অন্যের নম্বরে টাকা চলে যাবে। এই নম্বরতো কোনভাবেই আপনার নম্বরের সঙ্গে ম্যাচিং করেনা’। এ্যাড. মিজান বলেন, ‘ বিকাশ এজেন্টকে আমার মোট ব্যালান্স পরীক্ষা করতে বললে সে তা পরীক্ষা করে এবং জানায় যে, ব্যালান্স আছে ১০ হাজার ৩৯ টাকা। অথচ প্রতারক চক্রের পাঠানো সেন্ড মানি’র মত হুবাহু  ম্যাসেজে লেখা আছে রিসিভ ৫,১০০ রেফাঃ ২ ব্যালান্স ১০,৬৭২.৭৪ ...। তিনি বলেন, বিকাশ এজেন্টের দেয়া পরামর্শ অনুযায়ী আমি ওই প্রতারককে ফোন করে বিকাশে টাকা না নিয়ে নগদ টাকা নেয়ার জন্য তার অবস্থান জানতে চাইলে সে জানায় না ভাই নগদ দেয়ার দরকার নেই বিকাশেই দেন। ভাই আপনার টাকা পাওয়া নিয়ে কথা নগদ হলেই তো ভাল তাকে এমন কথা বলা হলে সে আবারও বিকাশেই টাকা দেয়ার অনুরোধ করে। ক’দিন থেকে এমন কাজ করছে এ প্রশ্ন করতেই প্রতারক ফোনটা কেটে দেয়। এরপর থেকে ওই নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এদিকে একই দিন চাঁপাইনবাবগঞ্জে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এক কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী এলাকার এক গৃহবধুকে ০১৬৭৯৪৬৪৪৩২ নম্বর থেকে ফোন করে এবং ওই গৃহবধুকে জানায় যে, তার (গৃহবধু’র) বিকাশে মাত্র ৩ শ টাকা ভুল করে চলে গেছে। ওই সময় ৩ শ টাকা ফেরত দেয়ার অনুরোধ জানানো হয়।
ওই কর্মকর্তা জানান, ওই গৃহবধু টাকা ফেরত দিতে জানেনা বলে জানালে তাকে প্রতারকরা সেলফোন ব্যবহার করতে জানে এমন মহিলার কাছে ফোনটি নিয়ে যেতে বলে। ওই গৃহবধু প্রতরকদের কথা মত তার সেলফোনটি এলাকার এক মহিলার কাছে নিয়ে গিয়ে প্রতারকদের ফোন করে। এরপর প্রতারক ওই মহিলাকে সেলফোনে একটা একটা করে অপশন বলে সেটাকে ওই মহিলা অনুসরণ করে সবশেষে বলে পিন নম্বর টিপেন...ব্যাস এতেই ওই গৃহবধু’র যা টাকা ছিল তা চলে যায় প্রতারকদের ০১৭৫৮৭০৪১৫০ নম্বরে। ওই কর্মকর্তা জানান, প্রতারকরা ওই গৃহবধু’র ৩ হাজার ৩৭৫ টাকা হাতিয়ে নেয়।
এর আগে গত জানুয়ারি মাসে ২৪ তারিখ দুপুরে লটারির প্রলোভন দিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের নামোরাজারপুর হালুয়াবন্ধা এলাকার প্রতিবন্ধি রুহুল আমীনের প্রতিবন্ধি মেয়ের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়। প্রতারকদের ০১৭৩৫২৪১১০৫ নম্বরে প্রথমে ১ হাজার টাকা তার কিছুক্ষণ পরেই ৫ হাজার ১ শ টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়। 
একের পর এক প্রতারক চক্র টাকা হাতিয়ে নেয়ায় বিকাশসহ অন্যান্য মোবাইল ব্যাংকিং-এর গ্রহক ও সাধারণ মানুষ আত্মংকের মধ্যে রয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ শাহনেয়ামতুল্লাহ কলেজের শিক্ষার্থী আসাদুল্লাহ বলেন, ‘ আমাদের চাঁপাইনবাবগঞ্জেই যদি এতো মানুষ প্রতারণার শিকার হয় তাহলে সারাদেশ প্রতিদিন কত পরিমাণ মানুষ প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। কত মানুষকে সর্বশান্ত করছে মুষ্টিমেয় প্রতারকরা’। তিনি ক্ষুব্দ হয়ে প্রশ্ন করে বলেন, ‘ তথ্য প্রযুক্তির যুগে প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রতারকদের ধরা কি খুবই কঠিন। তাদের ধরা হচ্ছেনা কেন?’।


চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক/