শিবগঞ্জে পাকা আম থেকে আমতা তৈরী করে প্রায় ৩ হাজার মানষের বাড়তি আয়

টিপ টিপ বৃষ্টি হচ্ছে। এ বৃষ্টির মধ্যেও মাথায় একটি মাথল ও  হাত একটি ব্যগ নিয়ে উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নাধীন গোপালপুর মাঠে   আম বাগানে ছুটাছুটি করছে পারচৌকা গ্রামের  রুমন নামে ৮/১০ বছরের একটি ছেলে । তাকে জিজ্ঞাসা করলে সে জানায় ব্যাগে পাকা  আম আছে। আমি প্রতিদিনই সকাল ও বিকালে বাগানে এসে আম কুড়ায় এবং এ আম আমার মাকে দিই। মা  এ সমস্ত আম খেকে আমতা তৈরী করে গ্রামে ফেরীওয়ালাদের কাছে বিক্রী  করে আমার লেখাপড়ার খরচ যোগায়। শুধু রুমনই নয় শিবগঞ্জ উপজেলার প্রায় প্রতিটি গ্রামের গরীব দুঃখী  পরিবারগুলোর শত শ ত  স্কুল পড়–য়া ছেলেরা আম কুড়িয়ে নিজের পড়ার খরচ যোগায়। শুধূ তাই নয় শিবগঞ্জে  চিরাচরিত প্রথা অনুযায়ী বড় বড় আম বাগানের গাছের আম মালিকের এবং পড়া আম গরীব-দুঃখীর । তাই  বিনা টাকায় কুড়ানো পাকা আম থেকে আমতা তৈরী, ফেরীওয়ালা হিসাবে গ্রামে গ্রামে আমতা ক্রয় করা ও আড়ত খুলে আমতা গুদাম জাত ও জেলার বাইরে সরবরাহ পর্যন্ত শিবগঞ্জে প্রায় শিশু কিশোর থেকে বৃদ্ধা পর্যন্ত প্রায় ৩হাজার মানুষ জীবীকা নির্বাহ করছে। এমনকি অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারও আমতা তৈরী করে সারা বছর ধরে খায়।    
শিবগঞ্জ উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা  ও  জানা গেছে আম মৌসুমে বিশেষ করে মহিলাদের জন্য একটি কর্মসংস্থান হচ্ছে পাকা আম থেকে আমতা তৈরী করা । প্রায় প্রতিটি গ্রামের মহিলারা এখন পাকা আম থেকে আমতা তৈরী করা নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। সরজমিনে গিয়ে কানসাট আব্বাস বাজার এলাকার বেহুলা, বাগড়া টোলা গ্রামের মারজিনা, বিনোদপুরের শাহানা, মনাকষার রুমি, জবেদা সহ  কয়েকটি গ্রামের  ২০/২৫জন মহিলারা সাথে কথা বলে জানা যায় যে সমস্ত আম কিছুটা নষ্ট হয়ে যায় যা বাজারে বা আড়তে বিক্রী  হয় না বা আমের কিছু অংশ পাখিতে খেয়ে ফেলেছে  সে সমস্ত আমের নষ্ট টুকু কেটে ফেলে দিয়ে বাকী আম  কেটে  চুড়ায় (উনুনের উপর)  দিয়ে গরম করে আম গলিয়ে ঠান্ডা করে  প্লেটে বা গামলার উল্টে পিঠে  প্রলেপ দেয়ার  মত করে লাগিয়ে  শুকানো হয়।  শুকানেরা পর যা দেখতে অনেকটা রুটি বা চিতায়ের মত । শুকানোর পর তা গ্রামে আসা ফেরীওয়ালাদের( গ্রামে গ্রামে যারা আমতা ক্রয় করে) কাছে কেজি প্রতি নিম্নে ৩০ টাকা ও উদ্ধে ৪০টাকা কেজি দরে বিক্রী করা হয়।  এভাবে প্রায় উপজেলার প্রত্যন্তাঞ্চলে প্রায় ২হাজার ৫শ জন মহিলা পাকা আমের আমতা তৈরী করে বছরের প্রায় ৪ মাস পর্যন্ত  স্বাবলম্বী থাকে। মনাকষা, বিনোদপুর ও কানসাট সহ বিভিন্ন ইউনিয়নের ৩০/৩৫জন গরীব   মহিলা জানায় আমতা তৈরীর জন্য আমাদেরকে আম কিনতে হয়না। স্বামী বা সন্তানদের বাগান থেকে কুড়িড়ে আনা পাকা আম থেকে আমতা তৈরী করে আমরা প্রতিদিন প্রায় ১শ টাকা করে হালাল উপার্জন করতে পারি। যা থেকে ছেলেমেয়েদের সারা বছরের লেখাপড়ার খরচ ও নিজেদের পোশাকের ব্যবস্থা করতে পারি।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন অল্প শিক্ষিত মহিলা জানান যদি সরকার থেকে পাকা আম থেকে আমতা তৈরীর প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা থাকতো তাহলে শিবগঞ্জের আমতা আরো বেশী বাজারজাতকরণ হতো এবং আরো বেশী পরিমান অর্থ উপার্জন করা সম্ভব হতো। ফেরীওয়ালা দিলীপ কুমার জানায় আমি প্রতিদিন ৩৫/৪০ কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা দরে আমতা ক্রয় করে কানসাট আমতা আড়তে বিক্রী করি। কেজি প্রতি ৭ে থকে ১০ টাকা লাভ হয়। তিনি আরো জানায়  আমার মত প্রায় ৩শ ফেরীওয়ালা  এভাবে গ্রামে গ্রামের আমতা ক্রয় করে বেড়াচ্ছে। এটি বছরে মাত্র ৪ মাস স্থায়ী হলেও  একটি লাভ জনক ব্যবসা ।  চাঁদপুর থেকে আগত আড়তদার ইসমাইল জানান আমরা  চাঁদপুর, কেরানীগঞ্জ, শ্যামনগর, টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসে  কানসাট গোপালনগর মোড়ে ১৫/২০টি আড়ত খুলে প্রায় ৪ মাস যাবত নিম্নে ৩৫ টাকা থেকে উদ্ধে ৫৫টাকা কেজি দরে আমতা ক্রয় করে  ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠায়।তিনি আরো জানান  এই ১৫টি আড়তে প্রায় ১শ জন কর্মচারী কাজ করি। সপ্তাহে একবার ট্রাক বোঝাই আমতা ঢাকা পাঠাই। সেখানে আমতাগুলোকে সারা বছরের জন্য খাওয়ার উপযোগী  করে  সংরক্ষন করা হয়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ সফিকুল ইসলাম, নিজস্ব প্রতিবেদক, শিবগঞ্জ/ ১৮-০৮-১৫

,