৬২ বছরে পদার্পণ করল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

দেশের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তবর্তী জেলা শহর রাজশাহী । পদ্মা নদীবিধৌত রাজশাহী একসময় হয়ে উঠেছিলো প্রাচীন বরেন্দ্রভূমির প্রাণকেন্দ্র । বরেন্দ্রভূমিতে সহস¯্র বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো বৃহত্তর রাজশাহীর নঁওগার পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার ।  এই বিহার জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার জন্য একটি উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানরূপে গড়ে উঠেছিলো । যা ধীরে ধীরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা লাভ করেছিলো। এখানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আসতো শিক্ষা লাভের জন্য । তবে ধীরে ধীরে এ উত্তর অঞ্চল অর্থনীতি ও শিক্ষায় পিছিয়ে পরে ।
পরবর্তীতে শিক্ষা ব্যবস্থাকে উন্নত করার জন্য ভারতশাসক ঔপনিবেশিক সরকার ভারতবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম জোরালো করার উদ্দ্যোগ নেয়। ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটি কমিশন (পরে স্যাডলার কমিশন )১৯১৭ সালের ৬ জুলাই এ বিষয়ে একটি নতুন সিদ্ধান্ত নেয় । ওই সিদ্ধান্তে অনুসন্ধানপূর্বক কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দোষ ক্রটি খুঁজে বের করে তার সংস্কারের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয় । কমিটির সভাপতি হন বিলেতের লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম ই স্যাডলার ।
সে সময় কলকাতা বিশ্বদ্যিালয়ের অধীনস্ত কলেজের মধ্যে  উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে খ্যাতি ছিলো রাজশাহী কলেজের । বিভিন্ন তথ্য গবেষণা করে স্যাডলার সাহেব রাজশাহী কলেজকে একটি আবাসিক  বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর  করার জন্য সুপারিশ করেন । কিন্তু দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক বৈরী আবহাওয়ার কারণে স্যাডলারের সুপারিশমালা বাধার মুখে পড়েন ।
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের অবসাওে পর দেখা দেয় নুতন সংকট । তৎকালিন পাকিস্থান সরকার এক আদেশবলে পূর্ব পাকিস্থানের সব কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে করার প্রক্রিয়া শুরু করে। সরকারি ওই আদেশের বিরুদ্ধে এবং স্যাডলার কমিশনের সুপারিশ অনুসারে রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা  করার জন্য আন্দোলন শুরু হয় । রাজশাহীর কৃদ বিদ আইনজীবী মৌলবী মাদার বখশ এবং রাজশাহী কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ইসরাত হোসেন জুবেরীর যৌথ প্রচেষ্টায় ১৯৫৩ সালে ৩১ মার্চ প্রাদেশিক পরিষদে আইন পাশ হয় । পরে ১৬ জুন ওই বিলে প্রাদেশিক গভর্নর সম্মতি প্রদান করেন । ১৯৫৩ সালে আজকের এই দিনে ইসরাত হোসেন জুবেরিকে উপাচার্য নিযুক্ত করে বিশ্ববিদ্যালায়ের কার্যক্রম শুরু হয় ।
দেশের উত্তরাঞ্চলের মাত্র ১২ টি ডিগ্রী কলেজ এবং আটটি ইন্টারমেডিয়েট কলেজ অধিভুক্ত করে সাতটি একাডেমিক বিভাগ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয় । গোড়াতে শিক্ষার্থী ছিলো মাত্র ১৬১ জন । পদ্মাতীরে ওলোন্দাজদের নির্মিত ‘বড়কুঠি’নামে ইতিহাস প্রসিদ্ধ রেশম কুঠিকে করা হয় বিশ্ববিদ্যালয় ভবন ।  ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাশ হতে থাকে রাজশাহী কলেজে । শহরের ভারা করা নানা স্থানে চলতে থাকে অফিসের কাজ ।
এ অবস্থার নিরসন ঘটে কয়েক বছর পরেই, ১৯৬১ সালে যখন শহর থেকে তিন কিলোমিটার পূর্ব দিকে মতিহারের সবুজ চত্বরে ৩০৩ দশমিক ৮০ হেক্টর জমির ওপর লে. কর্নেল জি টমাস প্রণীত কলম্বো প্ল্যান অনুযায়ী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস স্থানান্তর করা হয় । এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন ৫০ টি একডেমিক বিভাগ আটটি  অনুষদ, পাঁচটি ইনস্টিটিউট রয়েছে । প্রায় সাড়ে তিন হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে এবং প্রায় দেড় হাজার শিক্ষক তাদের পাঠদানের সাথে সংশ্লিষ্ট আছেন ।
প্রায় ছয় দশকে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিপুল সংখ্যাক শিক্ষার্থী ¯œাতক, ¯œাতকত্তোর এবং এমফিল ও পিএইচডির মতো বিশেষায়িত ডিগ্রী অর্জন করেছেন । এই শিক্ষার্থীদের অনেকেই দেশ পেরিয়ে আন্তর্জাতিক বিশ্বে তাঁদের সাফল্য রেখেছেন । 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ রবিউল আওয়াল, নিজস্ব প্রতিবেদক, রাবি/ ০৬-০৭-১৫