প্রধানমন্ত্রী সফর > আন্তঃনগর ট্রেনের দাবি উপেক্ষিতই থেকে গেল

চাঁপাইনবাবগঞ্জের সর্বস্তরের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি আন্তঃনগর ট্রেনের মাধ্যমে সরসারি ঢাকা যাতায়াত, প্রধানমন্ত্রীর সফরে উপেক্ষিতই থেকে গেল। রেলওয়ে স্টেশনের আধুনিকায় ও রেলপথ সংস্কারের পরও নানা জাটিলতায় আটকে থাকা আন্তঃনগর ট্রেন চালুর বিষয়ে শনিবারের কলেজ মাঠের জনসভায় ঘোষণা আসবে চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসীর এমন প্রত্যাশা থাকলেও কোনই কথা হয়নি। ফলে প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত আন্তঃনগর ট্রেন চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসীর কাছে অধরায় থেকে যাচ্ছে। 
রেলযোগাযোগ ব্যবস্থা জোরদার করতে বাংলাদেশ রেলওয়ে রাজশাহী-রহনপুর বর্ডার এবং আমনুরা-চাঁপাইনবাবগঞ্জ সেকশন সমূহ পূণর্বাসন প্রকল্প নামের একটি নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে ২০১১ সালে প্রায় ১ শ ৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজশাহী-রহনপুর এবং আমনুরা-চাঁপাইনবাবগঞ্জের দীর্ঘ ৯২ কিলোমিটার রেলপথের সংস্কার ও রেলওয়ে স্টেশনের আধুনিকায়ন কাজ শুরু হয়। রেলের ওই উন্নয়ন কাজের সময় ২০১১ সালের ২৩ এপ্রিল চাঁপাইনবাবগঞ্জ সফরে এসে সরকারি কলেজ মাঠের জনসভায় প্রধানন্ত্রী শেখ হাসিনা জেলাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে আন্তঃনগর ট্রেনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।  জনসভায় প্রধানমন্ত্রীর ওই ঘোষণায় চাঁপাইনাবাবগঞ্জের লাখো মানুষ আশায় বুক বেঁধেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির পর মূল প্রকল্পের প্রায় ৮০ ভাগ কাজ শেষের মাথায় ২০১২ সালের  ১ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয় ‘আন্তঃনগর’ শ্যাটল ট্রেনের। তৎকালিন রেল মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত উদ্বোধন করেন শ্যাটল ট্রেনের। রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, উদ্বোধনের দিন থেকেই শ্যাটল ট্রেনটি আন্তঃনগর সংযোগ ট্রেন হিসেবে কাজ করছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনে আন্তঃনগরের টিকিট কাটা যাত্রীরা  শ্যাটল ট্রেনে রাজশাহী গিয়ে আন্তঃনগর ট্রেনের নির্ধারিত আসনে ঢাকা যাচ্ছেন। 
যাত্রী সাধারণ জানিয়েছেন, নির্ধারিত টিকিট কেটে শ্যাটল ট্রেনে রাজশাহী গিয়ে ট্রেন পরিবর্তন করে আন্তঃনগর ট্রেনের সুবিধা ভোগ করা ঠিক দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মত। পরিবার পরিজন নিয়ে যাত্রীদের ট্রেন পরিবর্তনে নানান সমস্যায় পড়তে হয়। যাত্রীরা জানায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকা যেতে রাজশাহী গিয়ে নির্ধারিত ট্রেন পাওয়া গেলেও ঢাকা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আসতে যাত্রীদের ভোগান্তির শেষ থাকেনা। আন্তঃনগর ট্রেনে ঢাকা থেকে আসা চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষকে নেমে যেতে হয় রাজশাহীতে। সেখানে চাঁপাইনবাবগঞ্জ অভিমুখে আসা লোকাল কিংবা মেইল ট্রেনের জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়। কিংবা চাঁপাইনবাবগঞ্জ আসতে হলে যাত্রা করতে হয় বাসে। এক্ষেত্রে ‘ব্যাগ বগেজ’ ও পরিবার পরিজন নিয়ে ভোগান্তির শেষ থাকেনা। চরম দূর্ভোগের মধ্যে পড়তে হয় যাত্রী সাধারণকে। এ দুর্ভোগে পড়া সাধারণ মানুষ বহু আগে থেকেই দাবি করে আসছেন সরাসরি আন্তঃনগর ট্রেনের। তারা মানববন্ধন, বিক্ষোভ এমনকি যিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সেই প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপিও প্রদান করা হয়। কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি সেই দাবি। 
দীর্ঘ চার বছর পর আবারও চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও একটি জনসভায় যোগদিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষের প্রত্যাশা সৃষ্টি হয়েছিল জনসভা থেকে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা আসবে সরাসরি আন্তঃনগর ট্রেনের ব্যাপারে। কিন্তু জনসভায় কোনই কথা হয়নি আন্তঃনগর ট্রেন প্রসঙ্গে। 
জনসভায় যোগ দেয়া বহু সাধারণ মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ ডটকমকে বলেন, ‘শনিবারের জনসভায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের ডজনখানেক নেতা ও জনপ্রতিনিধি বক্তব্য রেখেছেন। কিন্তু কেউই বলেননি আন্তঃনগর ট্রেনের কথা’। 
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তার বক্তব্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষের জন্য বেশ কিছু নতুন উন্নয়ন প্রকল্পের প্রতিশ্রুতি দিলেও জনসভায় দাবি না উঠায় উপেক্ষিত থেকে গেল আন্তঃনগর ট্রেন। তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল ওদুদ বলেছেন,  ‘একটি বাইপাস জটিলতায় আটকে আছে আন্তঃনগর টেন সার্ভিস। সমস্যা কাটিয়ে উঠে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আন্তঃনগর ট্রেন চালু করা হবে’। 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক/ ১৭-০৫-১৫