‘গুরু ঝড়ের’ পর ‘লঘু ঝড়েই’ আবারও বিপর্যস্ত বিদ্যুৎ ব্যবস্থা > পুরো চাঁপাইনবাগঞ্জ শহর অন্ধকারে

শনিবার বিকেলের স্মরণকালের ভয়বহ ঝড়ে বিদ্ধস্থ বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করার ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতে মঙ্গলবার বিকেলের ঝড়ে আবারও চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। পুরো চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর অন্ধকারে ডুবে আছে। রাত ৮টার দিকে শহরের দু’ একটি এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা হলেও অন্যান্য এলাকায় তা বন্ধ রয়েছে। এদিকে, রাতে শিবগঞ্জে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হলেও গোমস্তাপুরে বন্ধ রয়েছে।
গেল শনিবার বিকেলের হটাৎ কালবৈশাখীর ঝড়ে বহু গাছপালা, বসতবাড়ি, টিনের চালার স্থপনার সঙ্গে লন্ডভন্ড হয়ে যায় বিদ্যুৎ সরবরাহ। ওই ঝড়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার বিদ্যুতের পোল পড়ে যায়। ছিড়ে যায় ৩৩ হাজার কেভি সঞ্চালন লাইনসহ বিদ্যুৎ সরবরাহের অন্যান্য লাইনের তারও। চাঁপাইনবাবগঞ্জ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, স্মরণকালের বিদ্যুতের এই বিপর্যয় কাটাতে স্বল্প সংখ্যক জনবল নিয়ে ধীরে ধীরে উন্নতি করা হয় বিদ্যুৎ সরবরাহের। তিন দিনের প্রচেষ্টা শেষে মঙ্গলবার দুপুরের দিকে স্বাভাবিক হয় পুরো বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা। ওই সূত্র জানায়, ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ বিদ্যুতের পোল ও তার ঠিক করতে রাজশাহী থেকে উল্লেখ্যযোগ্য সংখ্যক বিদ্যুৎ শ্রমিক নিয়ে আসা হয়। দুপুরে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে গেলে তাদেরকেও ফেরত পাঠানো হয়। এর মাত্র তিন ঘন্টার ব্যবধানে আবারও ঝড়ের ক্ষতির মুখে পড়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা।
স্থানীয়রা জানায়, মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বৃষ্টির সঙ্গে আবারও শুরু হয় কালবৈশাখী ঝড়। বৃষ্টির সঙ্গে বহু এলাকায় প্রচুর শিলা বৃষ্টিও হয়। এদিনের ঝড়ে গতি শনিবারের মত না থাকলেও আবারও বেশ কিছু বিদ্যুতের পোলসহ বহু গাছপালা উপড়ে পড়ে। ছিড়ে পড়ে বিদ্যুতের তার। বন্ধ হয়ে যায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরসহ অন্যান্য উপজেলার বিদ্যুৎ সরবরাহ।
বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী মঙ্গলবার বিকেলের ঝড়ে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা হচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার গোবরাতলা, বালিয়াডাঙ্গা ও নাচোলের কিছু অংশ। সদর উপজেলার চাঁপাই পলশা এলাকার সেলিম রেজা জানান, হটাৎকরে দেখা দেয়া ঝড়ে চাঁপাই পলশা এলাকার শত শত গাছপালা ভেঙ্গে পড়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রহনপুর সড়কের দু’ধারের গাছ উপড়ে পড়ে সড়কই বন্ধ হয়ে গেছিল। তিনি জানান, তার বাগানের ৩৮টি মেহগনি গাছের একটিরও উপরের অংশ নেয়। ভেঙ্গে পড়ে গেছে।
সূত্র জানিয়েছে, গোবরাতলার ঘুঘুডিমা, খলসি, মহিপুরসহ অন্যান্য এলাকায় গাছপালার বহু ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে, ঝড়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের থানার মোড়ের একটি বড় গাছ পড়ে বিদ্যুতের লাইন সর্ম্পণভাবে ছিড়ে গেছে। এ ছাড়া শহরের অক্ট্রয়মোড় এলাকায় দুটি বিদ্যুতের পোল পড়ে গেছে। ছিড়ে গেছে আরো দু’টি পোলের তার। সিএন্ডবি’র একটি বড় আম গাছ পড়ে যাওয়া এ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
অন্যদিকে বিদ্যুতের পোল পড়ে যাওয়া ও তার ছিড়ে যাওয়ার কারণে পুরো চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডে আবাসিক প্রকৌশলী (নির্বাহী) জাকির হোসেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ ডটকমকে রাত ৮টার দিকে বলেন, ‘ একটা ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আবাও ঝড়ের আঘাত। এ মাত্র (রা ৮টায়) ৩৩ হাজার কেভি লাইলে লোড পেয়েছি। বিভিন্ন এলাকায় চেকিং টিম কাজ করছে। ক্ষয়ক্ষতির অবস্থা ও চেকিং টিমের রির্পোটের উপর এলাকা এলাকাভেদে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করা হবে’। তিনি জানান, রাতেই বেশ কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এদিকে রাত ৮টার দিকে শহরের পুরাতন জেলা, হুরাপুরসহ আশেপাশের এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ দেয়া হয়েছে।
শিবগঞ্জ থেকে আমাদের প্রতিবেদক জানান, বিকেল থেকে শিবগঞ্জে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকলেও রাত পোনে ৮টার দিকে বিদ্যুৎ চালু। তবে গোমস্তাপুর থেকে আমাদের প্রতিবেদক জানান, গোমস্তাপুর ঝড় না হলেও বিকেলের বৃষ্টির সময় থেকেই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ৩৩ কেভি লাইনে বিদ্যুৎ না পাওয়ায় সেখানে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।


চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক/ ০৭-০৪-১৫