চৈত্রের প্রথম বৃষ্টিতে জনজীবনে স্বস্তি আর আমচাষে সোনায় সোহাগা

শীত পেরিয়ে গরমের শুরুতে এবছর একটু বেশী থাকায় হাঁপিয়ে উঠতে বসেছিলো চাঁপাইনবাবগঞ্জে জনজীবস এ জনজীবনে সোমবার বিকালের  চৈত্রের প্রধম বৃষ্টি একটু স্বস্তি এনে দিয়েছে। যদিও ঝড়-বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাতে ৪ জনের প্রাণহানী ঘটেছে। জনজীবনে এই বৃষ্টি স্বস্তি এনে দেয়ার পাশাপাশি আম চাষের জন্য হয়েছে সোনায় সোহাগা। দীর্ঘ অপেক্ষায় থাকা আমচাষীদের কাছে এই বৃষ্টি শুধু স্বস্তিই নয়, যেন তাদের কাছে আশীর্বাদ হয়ে এসেছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিভিন্ন এলাকার আমচাষীরা জানান, মৌসুমের শুরুতে বেশকিছু দিন ধরে খরার কারণে আমের গুটি ঝড়ে পড়ছিল। এই গুটি ঝরা বন্ধে বাগান মালিকরা সেচ পাম্পের মাধ্যমে গাছের গোড়ায় প্রতিদিন সেচ দিচ্ছিলেন। ফলে তাদের উৎপাদন ব্যয়ও বাড়ছিল।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার মহারাজপুর এলাকার আম ব্যবসায়ী ইব্রাহিম আলী জানান, ‘আমের গুটি হওয়ার পর যে মুকুলগুলো শুকিয়ে গিয়েছিল, সেগুলো বৃষ্টির ফলে ঝরে যাবে এবং আমের গুটিগুলো এখন দ্রুত বড় হবে। একই সঙ্গে বোটাও শক্ত হবে। ফলে গুটি ঝরে পড়া বন্ধ হবে।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শরফ উদ্দিন বলেন, ‘সোমবারের বৃষ্টির শুরুতে কিছুক্ষণ যে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যায় তাতে কিছু আমের গুটি ঝড়ে গেছে। তবে এ বৃষ্টির ফলে অন্তত বাকি যে গুটিগুলো থাকবে সেগুলোর বোটা অনেক শক্ত হবে। ফলে ভবিষ্যতে এই আমের গুটি ঝড়ে পড়ার আশঙ্কা অনেকাংশে দূর হবে।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, জেলায় এবার ২৪ হাজার ২৬০ হেক্টর আম বাগানে আমের চাষ হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মৌসুমের শুরুতে গাছে গাছে মুকুল এসেছিল বাম্পার। মুকুলের পর গুটিতে এই বৃষ্টি সহায়ক হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
ওই সূত্র জানায়, বৃষ্টিপাতের ফলে আম ছাড়াও মৌসুমী ফল ও সবজিচাষীরা উপকৃত হবে। তবে এখনো জেলার অন্তত ২০ শতাংশ জমির গম মাঠে রয়েছে। ওই গমক্ষেতের কিছুটা ক্ষতি হবে। এর বাইরে সকল ফসলেরই কম-বেশী উপকার হবে।

ভোলাহাটে এক বৃষ্টিতে স্বস্তি
বৈশাখের আগাম বার্তায় ধেয়ে আসা কালো মেঘ শান্তির বার্তা নিয়ে ভোলাহাটে এক বৃষ্টিতে সবার মনে স্বস্তি দিয়েছে। সোমবার বিকেলে অন্ধকার হয়ে বৈশাখের আগমনের ১৪ দিন পূর্বে ভয়ংকর বিদ্যুৎ চমকিতে চমকিতে হাজির হলেও শেষ বেশ হাল্কা ঝড়ের সাথে অঝরে ঝরলো বৃষ্টি। ঝরে পড়া বৃষ্টিতে ভোলাহাট উপজেলার ২ হাজার ১৫০ একর আম বাগান মালিক ও ব্যবসায়ী, ১৩ হাজার ৪৯৯ একর জমির বোর ধানচাষিসহ সকল ফসল চাষিরা বেশ স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলেছেন। আম ব্যবসায়ী গরিবুল, কুরবান, তাজামুল হক জানান, এ মূহূর্তে বৃষ্টি হওয়ায় পরির্চচার ব্যয় বহুলাংশে কমে গেছে এবং আমের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে বলে  আশা করছেন। এ দিকে ভূর্গের পানি নিচে নেমে যাওয়ায় গভীর নলকূপে পানি উত্তোলন না হওয়ায় সেচ সমস্যা দেখা দিয়েছিল। এ বৃষ্টির কারণে অনেকটাই ধানের জন্য সুফল বয়ে আনবে বলে ধান চাষিরা জানান। অপর দিকে এ বৃষ্টিতে আম ফাউন্ডেশন ভোলাহাটের ত্রি-বার্ষিক কার্যনির্বাহী কমিটির প্রচারনা বেশ জমে উঠেছিলো বিভিন্ন সময়ে স্থানীয় সরকারের অনুষ্ঠিত নির্বাচনের প্রচারনাকে ছাড়িয়ে রাস্তার মোড়ে মোড়ে অলিতে গোলিতে পোষ্টারে পোষ্টারে ছেয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু এক বৃষ্টিতে লন্ডভন্ড করে দিয়েছে সকল পোষ্টার। ব্যয় বেড়েছে প্রার্থীদের। এ দিকে হাল্কা ক্ষয়ক্ষতিরও খবর পাওয়া গেছে। সজনে গাছের নরম ডালগুলো ভেঙ্গে গেছে। তবে ক্ষতির চেয়ে আর্শীবাদ এ এক বৃষ্টি বলে এলাকাবাসি জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষ্ িঅফিসার আব্দুল ওয়াদুদ জানান, ২৭ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। তিনি বলেন, এ বৃষ্টি আর্শীবাদ ছাড়া অন্য কিছু ভাবাই যাবে না।


চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক/ ৩১-০৩-১৫