যৌথবাহিনীর অভিযানের পর পাল্টে গেছে সোনামসজিদ বন্দরের চিত্র

টানা অবরোধের প্রথম ১০ দিন দেশের দ্বিতীয় স্থল বন্দর চাঁপাইনবাবগঞ্জে সোনামসজিদ স্থল বন্দর মুখ থুবরে পরলেও যৌথবাহিনীর অভিযানের পর চিত্র পাল্টে গেছে সোনামসজিদ স্থল বন্দরের। গেল এক সপ্তাহ আইন শৃংখলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের পাহারায় বন্দর থেকে পণ্যবাহী ট্রাকের বহর দেশের বিভিন্ন স্থনে যাচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জে কোন রকমের হামলা ছাড়াই। সোনামসজিদ স্থল বন্দরে কিছুটা অস্বস্তি থাকলেও ফিরে এসেছে কর্মচাঞ্চল্য।
বন্দর সূত্র জানিয়েছে, ৫ জানুয়ারি ডাকা টানা অবরোধ কর্মসুচির ফলে সোনামসজিদ স্থল বন্দর থেকে আমদানী পণ্যবাহী ট্রাকে দফায় দফায় হামলা ভাঙ্গচুর ও অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটে। এমনকি আইন শৃংখলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের পাহারায় যাওয়া ট্রাকের বহরেও ককটেল হামলা ও ট্রাকে আগুন দেয়া হয়। ওই সূত্র জানিয়েছে, টানা অবরোধের প্রথম সপ্তাহে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ মহাসড়ক ও ভোলাহাট-গোমস্তাপুর সড়কে অন্তত ১২টি ট্রাক ও পিকআপে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে। আহত হয় বেশ কিছু চালক, আইন শৃংখলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যসহ সাধারণ মানুষ। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে গেল ১০ জানুয়ারি থেকে একেবারেই বন্ধ হয়ে যায় আমদানী রপ্তানী কার্যক্রম।
সোনামসজিদ স্থল বন্দরের সিএন্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সচিব সোহেল আহম্মেদ পলাশ বলেন, ‘ওই সময় আমদানীকারক পণ্য পরিবহনে চরম ঝুকির কারণে আমদানী পণ্য ভারত থেকে সোনামসজিদ বন্দরে ঢোকা বন্ধ করে দিলে ভারতের মোহদীপুর বন্দরে আটক পড়ে প্রায় দেড় হাজার পণ্যবাহী ট্রাক’। তিনি বলেন, ‘ ওই আটকে পড়া পণ্যবাহী ট্রাকগুলোর মধ্যে বহু পচনশীল পণ্য থাকায় চরম দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়েন আমদানীকারক ও রপ্তানীকারকরা’।
বন্দর সূত্র জানায়, ১০ জানুয়ারি থেকে ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত বন্দরে কোনই আমদানী পণ্যের ট্রাক বন্দরে না ঢোকায় গোটা বন্দর মুখ থুবরে পড়ে। এরই মাঝে গত ১৫ জানুয়ারী শিবগঞ্জের বিভিন্ন এলাকাসহ বন্দর সংলগ্ন শাহবাজপুর এলাকায় যৌথ বাহিনীর দিনভর অভিযান পরিচালিত হলে পরিস্থিতি উন্নতি’র দিকে যায়। ‘উন্নত’ এই পরিস্থিতিতে গত ১৯ জানুয়ারি দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসন, পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাব কর্মকর্তারা সোনামসজিদ স্থল বন্দরের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্মকর্তা ও ভারতের মোহদীপুর রপ্তানীকারক গ্রুপের নেতৃবৃন্দ্বের সঙ্গে বৈঠক করে মোহদীপুরে আটকে পড়া পন্যবাহী ট্রাক সোনামসজিদে ঢোকা শুরু করে।
সোনমসজিদ বন্দর পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পানামা পোর্ট লিংকের ব্যবস্থাপক জগন্নাথ কুমার সাহা বলেন, ‘বন্দরে এখন মোটামুটি স্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আজকে (মঙ্গলবার) ভারত থেকে চার শ গাড়ি বন্দরে ঢুকলেও ১৯ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ৩ শ করে ট্রাক ঢুকেছে’। তিনি জানান, ১৯ জানুয়ারি থেকে ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত এক হাজার ৮৭৬ ট্রাক ভারতীয় এবং ৪৬৮ বাংলা ট্রাক মিলিয়ে মোট দু হাজার ৩৪৪ টি পণ্যবাহী ট্রাক সোনামসজিদের পানামা পোর্ট লিংকের ইয়ার্ডে ঢুকেছে। তিনি বলেন, আইন শৃংখলা বাহিনীর পাহারায় পর্যায়ক্রমের পণ্যবাহী ট্রাকগুলো খালাস করা হচ্ছে। এ ক’দিনে দু’ হাজারেরও বেশী ট্রাক বন্দর থেকে ছেড়ে গেছে। গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার প্রায় ২শ করে ৪ শ পণ্যবাহী ট্রাক বন্দর থেকে ছেড়ে গেছে।
বন্দর সূত্র জানায়, মঙ্গলবার বন্দরে খালাসের অপেক্ষায় ট্রাক আটকে ছিল মাত্র ৩২০টি। ওই সূত্র জানায়, এ সময়ের মধ্যে বেশ কিছু পণ্য রপ্তানীও হয়েছে সোনামসজিদ বন্দর দিয়ে।
এদিকে, যৌথ বাহিনীর অভিযানের পর পণ্যবাহী ট্রাকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটলেও রাজশাহীতে হামলার শিকার হতে হয়েছে কয়েক বার। এ কারণে আমদানী কারকদের দুশ্চিন্তার বাইরে আসতে পারছেন না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আমদানীকারক বলেন, ‘অবরোধ আর আন্দোলনের নামে সংহিসতার কারণে ব্যাবসা বাণিজ্য একেবারে লাটে উঠেছিল। এখন কিছুটা করা গেলেও এভাবে তো চলা যায় না’।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক/ ২৯-০১-১৫