দুর্গম চরাঞ্চলের দরিদ্র অসহায় মানুষের পাশে কাজ করছে নদী ও জীবন প্রকল্প

বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা গ্রামীন বহুমুখী উন্নয়ন সংস্থা (জিবাস) এর আয়োজনে জিবাস নদী ও জীবন-২ প্রকল্প বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বাস্তবায়নে ধারণা এবং করণীয় বিষয়ে জেলার প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের নিয়ে মঙ্গলবার মতবিনিময় সভা হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জে। সকালে জিবাসের নিজস্ব কার্যালয়ে প্রবীন সাংবাদিক তসলিমউদ্দিনের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় অতিথি ছিলেন প্রথম আলো’র নিজস্ব প্রতিবেদক আনোয়ার হোসেন দিলু। স্বাগত বক্তব্য রাখেন জিবাসের নির্বাহী পরিচালক তরিকুল ইসলাম টুকু। কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড এবং আইরিশের অর্থায়নে শিবগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, স্বাস্থ্য সেবা, কৃষকদের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষন ১ হাজার ৭’শ ৫০ পরিবার নিয়ে কাজ করছে জিবাস। সভায় জিবাসের কার্যক্রম নিয়ে বক্তব্য রাখেন, দৈনিক কালের কন্ঠ ও এনটিভির চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি শহীদুল হুদা অলক, সাপ্তাহিক সোনামসজিদের সম্পাদক মোহাঃ জোনাব আলী, চ্যানেল আই’র জেলা প্রতিনিধি ও দৈনিক চাঁপাই দর্পন এর সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম রঞ্জুসহ অন্যরা। ২০১১ সালের আগষ্ট থেকে জিবাস দুর্গম চরাঞ্চলের দরিদ্র অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে ১ হাজার ৫’শ ৫০টি পরিবারের মাঝে গরু-ছাগল বিতরণ, বিভিন্ন সবজি বীজ, গাছের চারা বিতরণ, রেশম সুতা কাটা প্রশিক্ষন, সেলাই মেশিন প্রশিক্ষন, গরুÑছাগলের ভ্যাকসিন প্রদান, কৃষকদের জৈব সার ব্যবহার ও উৎপাদনে প্রশিক্ষন, শীতার্তদের মাঝে বস্ত্র বিতরণসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে আসছে বলে জানানো হয় মতবিনিময় সভায়। সভায় বক্তারা চরাঞ্চলের অসহায় দুঃস্থ আরও বেশী পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে দ্বীপচরের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে কাজ করার জন্য জিবাসের প্রতি আহবান জানান। মত বিনিময় সভায় বক্তারা বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের দুর্গম চরাঞ্চলের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য বাজেট বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম হাতে নেয়া জরুরী। বিশেষ করে শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা ও দুর্লভপুর ইউনিয়নের দুর্গম চরের সুবিধা বঞ্চিত মানুষের জীবনে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা, চিকিৎসা সেবাসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রয়োজন। আর এসব ক্ষেত্রে বিশেষ ভুমিকা রাখছে কনসার্ন ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ও আইরিশ এইড‘র আর্থিক সহায়তায় গ্রামীন বহুমুখী উন্নয়ন সংস্থা-জিবাস নদী ও জীবন-২প্রকল্পের মাধ্যমে ২০১১ সাল থেকে শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা ও দুর্লভপুর ইউনিয়নের চরাঞ্চলের পিছিয়ে পড়া দরিদ্র জনগোষ্ঠির জন্য প্রায় ১৭ শত ৫০জন উপকার ভোগী পরিবারের মাঝে বীজ, সার কীটনাশক, আয়বর্ধক কাজের জন্য মুনফাবিহীন ২ লক্ষ টাকার কৃষি ঋণ বিতরণ, উন্নত প্রযুক্তি ও বিভিন্ন জাতের  ফলজ, বনজ ও ঔষধী গাছের পায় ১২ হাজার ২’শ ৫০টি চারা বিতরণ, আইপিএম ও আইসিএম ক্লাব গঠন, গবাদী পশু মধ্যে প্রায় ১ হাজার ৪’শ ৭০টি ছাগল বিতরণ, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ৪৮ জন ব্যাবসায়ীকে আর্থিক সহায়তা প্রদান, পাঁকা ও দুর্লভপুর ইউনিয়নে ২ টি সমবায় বাজার তৈরি, গরু মোটাতাজাকরণ, মিনি দেশি মুরগির খামার ২’শ ১৮টি ফার্ম স্থাপন, চিকিৎসা কেন্দ্র ও ক্যাম্প স্থাপন, ৪৬টি ভেড়া বিতরণ, কৃষক মাঠ স্কুল ৩টি, ৬০ জনকে রেশম সুতা লাটায় করণ চরকা বিতরণ, ১৫ জনকে সেলাই মেশিন বিতরণ, ৬টি কৃষি পরামর্শ কেন্দ্র, মিনি পাঠা ফার্মা ২টি, ২৫ জনকে পোল্টি মুরগির খামার তৈরি, ৬০ জনকে টুপি সেলাই, গবাদী পশু টীকা ও চিকিৎসা কেন্দ্র ৬টি, ভ্যাকসিন সরবরাহসহ বিভিন্ন ধরনের কর্মর্সচি বাস্তবায়ন করে আসছে চরাঞ্চলের পিছিয়ে পড়া দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের লক্ষে। এছাড়াও মতবিনিময় সভায় নদী ও জীবন ২ প্রকল্পের বিভিন্ন দিক তুলে ধরার পাশাপাশি পিছিয়ে পড়া চরাঞ্চলের মানুষের যোগাযোগ, বিদ্যুৎ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য-স্যানিটেশন, কৃষি ব্যবস্থাসহ সরকারিভাবে প্রদত্ত সেবাগুলো নিয়েও আলোচনা হয়। সভায় জানানো হয়, যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় চরাঞ্চ্যলের উৎপাদিত কৃষি পণ্য বাজারজাত করতে না পারায় অত্যন্ত কম মূল্যে স্থানীয়ভাবে বিক্রি করতে হয়। ফলে কৃষকদের উৎপাদন খরচই উঠছেনা। চমর ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন কৃষকরা। যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নেও সরকারের সু-দৃষ্টি কামনা করা হয়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক/ ০২-১২-২০১৪