সীমান্ত পেড়িয়ে অবৈধ অস্ত্র ঢুকছেই > জেলাজুড়ে ১৪ অস্ত্র ব্যবসায়ীর রমরমা অবস্থা

দেশের সীমান্ত জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র ঢুকছে। সাম্প্রতিক সময়ে সীমান্ত পেড়িয়ে ভারত থেকে অস্ত্র আসার মাত্রা বহুগুন বেড়ে যাওয়ায় দেশের অস্ত্র আসা রুটগুলোর তালিকায় শীর্ষ পর্যায়ে চলে এসেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাম। জেলাজুড়ে ১৪ অস্ত্র ব্যবসায়ী রমরমাভাবে চালিয়ে যাচ্ছে অস্ত্রের কেনা-বেচা। প্রভাবশালীদের মদদে ওই ১৪ অস্ত্র ব্যবসায়ী তাদের অন্য ব্যবসার আড়ালে চালিয়ে যাচ্ছে অস্ত্র ব্যাবসা। ইতোমধ্যে গোয়েন্দা তালিকায় চলে এসেছে ওই ১৪ অস্ত্র ব্যবসায়ীর নাম।
সূত্র জানায়, দেশ জুড়ে অবৈধ অস্ত্র আসার পরিমাণ বৃদ্ধি মুখে সরকারিভাবে অস্ত্র ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের একটি তালিকা তৈরী করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে। এ জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগও নিয়েছে সরকার। সূত্র জানায়, সীমান্ত জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা, খাসেরহাট, শিংনগর, মনোহরপুর সীমান্ত এলাকা এক সময় অস্ত্র আসার নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসলেও এখন এর সঙ্গে যোগ হয়েছে  সোনামসজিদ ও তার আশেপাশের এলাকা। এ সব সীমান্ত পথ দিয়ে ‘বানের পানির’ মত ভারত থেকে ঢুকছে অবৈধ অস্ত্র। সীমান্ত এলাকায় অল্প সময়ের মধ্যে ‘গডফাদার’ বনে যাওয়া ব্যক্তিরা ভারত থেকে অবৈধ অস্ত্র এনে বাংলাদেশে বিক্রি করছেন। আর কামিয়ে নিচ্ছেন প্রচুর টাকা।
আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সূত্রগুলো জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে অস্ত্র আসার পরিমান উদ্বেগজনক হারে। মোটা টাকার বিনিময়ে অস্ত্র আনার কাজে ‘পাইট’ নিয়োগ করে অস্ত্র কেনা বেচা হলেও এর অন্তরানে থাকছেন প্রভাবশালীদের মদদে গড়ে উঠা অস্ত্র ব্যবসার ‘গডফাদার’রা। ওই সুত্র জানিয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দরে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট হিসেবে এবং অন্য কাজ করা বেশ কয়েকজন রযেছেন তারা তাদের বৈধ ব্যবসার আড়ালে অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা চালিয়ে আসছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা পড়া ওই তালিকায় তাদের নাম চলে এসেছে বলে ওই সুত্র জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, সোনামসজিদ স্থল বন্দরের সিএন্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনে সাবেক সভাপতি আখেরুল ইসলাম যিনি ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতিও। তিনি ক’দিন আগে গুলি করে আরেক যুবলীগ নেতা মনিরুল ইসলামকে হত্যা করার মামলায় আটক হয়েছে। ওই মামলায় আটক আরো দু’জন ১৬৪ ধারায় আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে বলেছেন, ‘ আখেরুল গুলি করে হত্যা করে যুবলীগ নেতা মনিরুলকে’। সূত্র জানায়, আখেরুলের ওই ব্যবহার করা অস্ত্রটি অবৈধ। অবৈধ অস্ত্র ব্যবহারকারী আখেরুল অস্ত্র ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। সেই জড়িত আখেরুলের ভাই সেনাউল ইসলাম। তিনি শ্রমিক লীগের রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত সানাউলের নামও রয়েছে সরকারি ওই গোয়েন্দা তালিকায়।
তবে, এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সানাউল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমি একজন ব্যবসায়ী- সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট। গত আন্দোলনের সময় জামায়াত-বিএনপির কর্মীরা আমার বাড়িতে আগুন দিয়েছে। আমি সোনামসজিদ স্থলবন্দরের শ্রমিক লীগের নেতৃত্ব দিই। কেউ আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে তালিকায় আমার নাম দিতে পারে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অস্ত্র চোরাচালানের যে অভিযোগের কথা বলছেন, এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা।’
এদিকে, দেশে অবৈধ অস্ত্র ঢোকার মাত্রা ‘ঝুকিপূর্ণ’ পর্যায়ে ঠেকায় অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে মাঠে নেমেছে আইন প্রয়োগ কারী সংস্থা। তারা জানিয়েছে, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তারা অস্ত্র উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে। চলতি অক্টোবর মাসে চাঁপাইনবাবগঞ্জে র‌্যাব ও বিজিবি’র হাতে প্রচুর পরিমাণ বিদেশী অস্ত্র, ম্যাগাজিন ও গুলি উদ্ধার হয়েছে। সর্বশেষ সোনামসজিদে র‌্যাবের হাতে আটক হয়েছে দু’ অস্ত্র ব্যবসায়ীও।
চাঁপাইনবাবগঞ্জস্থ বিজিবি’র ৯ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক জ লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবু জাফর শেখ মোহাম্মদ বজলুল হক বলেন, ‘গত পাঁচ-ছয় মাসে এ এলাকায় ৩৮টি আগ্নেয়াস্ত্র আটক করা হয়েছে। বিজিবি সদস্যরা অস্ত্র চোরাকারবারিদের আটক করে থানায় সোপর্দ করে।’ তিনি বলেন, ‘, ‘সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বিজিবি আন্তরিকভাবে অস্ত্র চোরাচালান রোধে চেষ্টা করে যাচ্ছে। তবে, যে পরিমাণ অস্ত্র ঢোকে, তার সব আটক করা সম্ভব হয় না’।
গাম্প্রতিক সময়ে র‌্যাব ও বিজিবি’র হাতে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র ধরা পড়ার ঘটনা এবং সীমান্ত পেড়িয়ে দেদারসে অস্ত্র ঢুকায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাগরিক নিরাপত্তাও হুমকীর মধ্যে পড়েছে এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।